শিশুরা চোখ খুলেছে, সবাই নিয়ম মানুন: প্রধানমন্ত্রী

নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দেখানো পথে সবাই ট্রাফিক আইন মেনে নিজের দায়িত্ব পালন করবে বলে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমাদের ছোট্ট শিশুরা আমাদের যে চোখ খুলে দিয়েছে, আমি আশা করি প্রত্যেকে স্ব স্ব স্থানে যার যার দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করবেন। পথচারীরা নিশ্চয়ই রাস্তার নিয়মকানুন মেনে পথ চলাচল করবে, ড্রাইভাররা হেলপাররা, তারাও যেন সকল নিয়ম কানুন মেনে গাড়ি চালাবেন, আমি সেটা আশা করি।’

রবিবার সকালে ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে এমইএইচ এলাকায় আন্ডারপাস নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করতে গিয়ে এই আশার কথা বলেন শেখ হাসিনা।

এই এলাকাতেই গত ২৯ জুলাই বাসচাপায় সেনানিবাস এলাকার শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। আর তার পরদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে নজিরবিহীন আন্দোলনে নামে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা।

আর এই আন্দোলন চলাকালেই এই এলাকাটিতে নিরাপদে পারাপারের জন্য আন্ডারপাস করার ঘোষণা আসে। তবে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই ঘোষণা হঠাৎ আসেনি, এটি আগে থেকেই নকশা তৈরি করা ছিল।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হওয়ার পর এতদিন আটকে থাকা প্রকল্পটি গতি পায় আর প্রধানমন্ত্রী এটি নির্মাণের দায়িত্ব দেন সেনাবাহিনীকে। বাহিনীটির ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এটি বাস্তবায়ন করবে।

এই আন্ডারপাসটি কেমন হবে তার ওপর অনুষ্ঠানে একটি এনিমেশন দেখানো হয়। এই পথটি নগরীতে থাকা তিনটি আন্ডারপাসের তুলনায় অনেক বেশি দৃষ্টিনন্দন। এর ভেতরে ফোয়ারা থেকে শুরু করে নানা জিনিস থাকবে। আর সেখানে গাদাগাদি করে চলতে হবে না। পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের একটি বড় অংশজুড়েই ছিল ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান। সেই সঙ্গে নিরাপদে রাস্তা পারাপারে সরকারের নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগের বর্ণনা।

নিরাপদ সড়কের দাবি উঠলেই সবার আগে আসে গাড়ি চালকদের বেপরোয়া চালনা। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে তার মধে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় যেনতেনভাবে রাস্তা পারাপারে। শতকরা ৪২ শতাংশ মৃত্যুই হয় এভাবে।

যত্রযত্র রাস্তা পারপার নয়

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও যান চলাচলের শৃঙ্খলার পাশাপাশি পথচারীদের আইন মানার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। সেই সঙ্গে মানুষের অসচেতনতায় প্রকাশ পায় হতাশাও।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ড্রাইভারদের ট্রেইনিংয়ের ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। কিন্তু ড্রাইভারগুলো ভালোভাবে ট্রেইনিংও করে না, অনেক সময় হেলপারদের হাতে গাড়ি ছেড়ে দেয় তার জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।’

শিশু কিশোরদের আন্দোলনের সময় সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চললেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আবার পুরনো বিশৃঙ্খলা ফিরে আসাতেও বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী।

‘যতদিন শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ছিল, তারা ট্রাফিক কন্ট্রোল করছিল এবং সবাই কিন্তু তাদের কথা মেনে নিয়েছিল, এটা ঠিক। …কিন্তু যখনই সবাই ফিরে গেল স্বাভাবিক হলো যানবাহন চলাচল, তারপর কী দেখি? রাস্তায় নেমে পাশেই ফুটওভার ব্রিজ, আমরা দেখলাম ইয়ং ছেলে মেয়ে সামান্য কয়েক কদম হাঁটলে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে পারে, সেটা না করে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে হাত দেখিয়ে দেখিয়ে।’

‘যারা গাড়ি চালান তারা জানেন, হাত দেখার সাথে সাথে একটা গাড়ি ব্রেক করা যায় না। ব্রেক করতে গেলেও কিন্তু অ্যাক্সিডেন্ট হয়, তার জন্যও সময় লাগে। কিন্তু হাত দেখিয়ে দেখিয়ে বেআইনিভাবে রাস্তা পার হওয়া, সেটাও কিন্তু গ্রহণযোগ্য নয়।’

‘সকলকে আমি বলব, রাস্তা পারাপার করার জন্য দাঁড়িয়ে একবার ডানে দেখতে হবে, একবার বামে দেখতে হবে কোনো গাড়ি আসে কি না। আর রাস্তা পারাপার হওয়ার জন্য যে সুনির্দিষ্ট জায়গাটা আছে, কোথাও ফুটওভারব্রিজ আছে, কোথাও আন্ডারপাস আছে, কোথাও জেব্রা ক্রসিং আছে, ঠিক সেই সব জায়গা দিয়েই পারাপার হতে হবে।’

হাসপাতাল আছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে এবং যেখানে বেশি মানুষের চলাফেরা প্রতিটি জায়গায় আন্ডারপাস এবং ওভারপাস করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। আর এসব এলাকায় যেন পর্যাপ্ত লাইট এবং সিসি ক্যামেরা থাকে, সেটাও নিশ্চিত করতে বলেন তিনি। বলেন, ‘যারা পারাপার হবে তাদের নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়, সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে।’

যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানামাওভারটেকিং নয়

সড়কে ‍নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া যাত্রী উঠানামা বন্ধ করে দিতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারিকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

‘বাস বা গাড়ি, যেকোনো কিছু, যদি বাস থামতে হয়, প্যাসেঞ্জার নামাতে হয়, তাহলে যেখানে স্টপেজ সেখানেই থামতে হবে। এর বাইরে যেখানে সেখানে যত্রযত্র নামানো যাবে না। নামালেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, তাদের ফাইন করতে হবে অথবা তাদের লাইসেন্স ক্যানসেল (বাতিল) করতে হবে।’

ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্সবিহীন চালকের গাড়ি সড়কে চলতে পারবে না বলেও জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

‘আর বাস ড্রাইভারদের লাইন দিয়ে বাস চালাতে হবে। একটা একটার পেছনে থাকবে, কোনোটা যদি ওভারটেক করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে নিতে হবে।’

‘এটা পুলিশের একটা দায়িত্ব। আইজি সাহেব এখানে আছেন, তাকে আমি বলছি, সেভাবে আপনাকে একটা নির্দেশ দিতে হবে, কোনোভাবে অনিয়ম করলে তা মানা যাবে না।’

অনিয়মকারী চালকদেরকে ধরা যায় না বলে সড়কে ডিজিটাল ক্যামেরা স্থাপন করে পর্যবেক্ষণের নির্দেশও দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা একবার রেট্রোস্পেকটিভ নম্বরপ্লেট তৈরি করে দিয়েছিলাম, এটা বোধহয় কেউ ফলো করে না। ফলো করতে হবে। তাহলে সঙ্গে সঙ্গে লেজার দিয়ে এদেরকে সিগন্যাল দিয়ে দিতে পারবেন এরা অনিয়ম করেছে, ব্যবস্থা নিতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের সব দাবি পূরণ হবে

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে শিক্ষার্থীরা যে নয়টি দাবি দিয়েছে, তার সব মেনে নেয়ার কথা আবারও বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, শিশুদের স্কুলে যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও হবে।

রমিজ উদ্দিন স্কুলে পাঁচটি স্কুলবাস দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্যান্য স্কুলেরও যদি প্রয়োজন হয়, আমরা বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা স্কুলের জন্য করে করে দেব। দেশের প্রত্যেকটা স্কুল সংলগ্ন স্পিড ব্রেকার, জেব্রা ক্রসিংসহ নিরাপদ ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা করে দেব।

‘প্রত্যেকটি স্কুলে ছুটির সময় আর শুরুর সময় অবশ্যই একজন ট্রাফিক পুলিশ নিয়োজিত থাকবে বিশেষ কার্ড এবং প্ল্যাকার্ড নিয়ে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও খুব ভালো ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে পারে, সেটা তারা প্রমাণ করে দিয়েছে। সেখান থেকেও আমরা কিছু ভলান্টিয়ার নিতে পারি, তবে অবশ্যই উঁচু ক্লাসের। সেখানে দাঁড়িয়ে শিক্ষকরা দায়িত্ব নেবেন। প্রত্যেকটা ছাত্রছাত্রী যেন নিরাপদে রাস্তাটা পার হতে পারে, সে ব্যবস্থা নেবেন।’

‘আর যেখানে যেখানে আন্ডারপাস, ওভারপাস করা এবং সেগুলো যেন ব্যবহার করে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

এডিটর-ইন-চিফ : মাহমুদ হাসান সোহেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : আবু বকর সিদ্দিক সাগর
নিউজরুম মেইল: khulnanews24@gmail.com এডিটর ইমেইল : editor@khulnanews.com
Khulna Office : Chamber Mansion (5th Floor), 5 KDA C/A, Jessore Road, Khulna 9100,
Dhaka Office : 102 Kakrail (1st Floor), Dhaka-1000, Bangladesh.
কপিরাইট © 2009-2020 KhulnaNews.com