স্বজন হারানোর দুঃসহ স্মৃতি ভুলে যাচ্ছে রোহিঙ্গা শিশুরা

রোহিঙ্গা শিশু কলিম উল্লাহর বয়স ১০ পেরোয়নি। সে চোখের সামনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গুলি খেয়ে মরতে দেখেছে বাবাকে। নির্যাতনের শিকার হতে দেখেছে মাকে। ৯ মাস আগে রাখাইন রাজ্যে সামরিক জান্তা ও মগদের আক্রমণের শিকার হয়ে মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে কলিম। এরপর আশ্রয় নেয় কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সব হারানোর দগদগে স্মৃতি নিয়ে বাংলাদেশে এসে আপাত স্বস্তির দেখা মিলেছিল।

তবু ভয় আর অজানা শঙ্কায় নির্যাতনের স্মৃতি নিয়ে মায়ের সঙ্গে ছায়ার মতো সময় কাটিয়েছে আশ্রয় ক্যাম্পে। তবে, বাংলাদেশে আসার পর থেকে লেখাপড়া, খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে শুরু করেছে কলিম উল্লাহ ও তার মতো অন্য সব রোহিঙ্গা শিশু। উখিয়ার কুতুপালং আইওএম শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষিকা শাহিনা আক্তার ও মোহছেনা বেগম বলেন, প্রতিদিন এসব রোহিঙ্গা শিশুকে ইংরেজি শিক্ষার পাশাপাশি বার্মিজ ভাষাও শেখানো হচ্ছে। কারণ মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে তারা যেন নিজেদের ভাষাতে কথা বলতে পারে। এ ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এসব কারণে রাখাইনের ভয়াবহ নির্যাতনের দুঃসহ স্মৃতিগুলো তাদের মন থেকে মুছে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার সমাজসেবার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. এমরান খাঁন বলেন, উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন এতিম শিশু শনাক্ত করা হয়েছে। এসব শিশুর লেখাপড়ার জন্য আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম, ব্র্যাক, মুক্তিসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থার উদ্যোগে তিন শতাধিক স্কুল রয়েছে। এসব শিশুকেন্দ্রে বার্মিজ ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষা শেখানো হচ্ছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার, ইউএন অর্গানাইজেশন এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গা শিশুদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এসব শিশুর উত্তম সুরক্ষার জন্য তাদের নিজ দেশে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে লালনপালনের ব্যবস্থা করার কোনো বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কক্সবাজার অফিসের প্রধান সংযুক্তা সাহানি বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের প্রতিটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য আইওএমের পক্ষ থেকে স্কুল ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। শিক্ষা ও বিনোদনের মধ্যে থেকে রাখাইনের ভয়াবহ নির্যাতনের দুঃসহ স্মৃতিগুলো ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে, এটা ভালো। এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান বলেন, উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তিন শতাধিক স্কুল ও বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে। এসব স্কুল ও বিনোদন কেন্দ্র পরিচালনা করছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাসহ বিভিন্ন এনজিও। মিয়ানমারের শিক্ষকদের পাশাপাশি এতে শিক্ষকতার সুযোগ পেয়েছেন স্থানীয় শিক্ষিত তরুণরা। কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) রিপোর্টে জানা যায়, গত বছর ২৪শে আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনের পর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই শিশু। এসব শিশুর লেখাপড়ার জন্য আইওএম, ব্র্যাক, মুক্তিসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থার উদ্যোগে তিন শতাধিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিশুদের বিনোদনের জন্য ইউনিসেফসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ১২০টি বিনোদন কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে ক্রীড়া ও নাটকসহ নানা ধরনের বিনোদন দিয়ে আনন্দে রাখা হচ্ছে এসব শিশুদের।

এডিটর-ইন-চিফ : মাহমুদ হাসান সোহেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : আবু বকর সিদ্দিক সাগর
নিউজরুম মেইল: khulnanews24@gmail.com এডিটর ইমেইল : editor@khulnanews.com
Khulna Office : Chamber Mansion (5th Floor), 5 KDA C/A, Jessore Road, Khulna 9100,
Dhaka Office : 102 Kakrail (1st Floor), Dhaka-1000, Bangladesh.
কপিরাইট © 2009-2020 KhulnaNews.com