গোপালভোগ ও গুটি জাত দিয়ে শুরু আমের বাজার
নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে। জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় পার করে ২০ মে( রোববার) থেকে শুরু হচ্ছে গাছ থেকে আম পাড়া। গোপালভোগ ও গুটি জাত বাজারজাতকরণের মাধ্যমেই খুলছে আমের বাজার। গেল কয়েকদিনের প্রস্তুতি শেষে সকাল থেকেই রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার বাগান থেকে শুরু হয়েছে গাছ থেকে আম নামানো। বৈশাখ মাসের কয়েকদিনের ঝড়ের তাণ্ডব থাকার পরেও এ বছর আমের ফলন ৬ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।
গত ৯ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে ২০ মে থেকে আম নামানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শুধু তাই নয় অন্যান্য জাতের আম গাছ থেকে পাড়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়। আম ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত চলবে বিভিন্ন জাতের আম নামানো।
রাজশাহীতে গাছ থেকে আম নামানোর সময় চলে আসায় চাষী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও আনন্দ এবং উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। কেবল যে নিজেরা খাবেন ঠিক তা নয়। সেই সাথে বাজারজাতকরণের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা বাড়বে সেই প্রত্যাশা থেকে। এ বছরেও বিগত সময়ের মতোই আমের দাম ভালো পাবেন বলে আশা করছেন চাষিরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে বনেদী জাতের আম গোপালভোগে ভরে যাবে বাজার। গাছে আমে পূর্ণতা এসে গেছে। এখন অপেক্ষা শুধু রসনা মেটাবার। সাথে থাকছে নানা স্বাদের ও নামের গুটি জাতের আম। দামে কিছুটা সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে গুটি আম রসনা মেটায় মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত মানুষের। যদিও এই গুটি আমেও ভাগ বসিয়েছে আচার জ্যাম আর জুস কোম্পানির লোকজন। তাদের কাছে এসব আম পছন্দের। ফলে এটি আর নিম্নবিত্তের আয়ত্বে থাকছে না। যদিও লাভ হচ্ছে বাগান মালিকদের। ফাটা কাটা সব ধরনের গুটি আম কিনে নেয় কোম্পানিগুলো। তাছাড়া গুটি আম গাছের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। দখল করছে বনেদী জাতের আম। আমের বাগান গড়ে উঠছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। বিভিন্ন দেশেও যাচ্ছে আম।
আম মৌসুমের মধ্যেই পবিত্র রমজানের তিন দিন অতিক্রম হতে যাচ্ছে। সুস্বাদু না হলেও বাজারে যে আম পাচ্ছেন তাই কিনে নিয়ে তৃপ্তি মেটানোর চেষ্টা করেছেন অনেকে।
আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে রাজশাহীতে শুরু হয়ে যাবে আম উৎসব। জুনের প্রথম সপ্তাহে বাজারজাত শুরু হবে মিষ্টি স্বাদের মন মাতানো আম ল্যাংড়া। সাথে সাথে আসবে রাণী পছন্দ, হিমসাগর, খিরসাপাতি, লক্ষণভোগসহ নানা নামের আম।
আকার ও স্বাদের ভিন্নতার কারণে আমের মহারাজা ফজলীর আগমন মধ্য জুন থেকে। সাথে থাকবে আম্রপালি। আশ্বিনা জাতের আম আসবে জুলাইয়ে। সব মিলিয়ে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় ধরে চলবে আমের ভরা মৌসুম।
সব নিয়ম-কানুন দিনক্ষণ মেনে বাজারে আসতে শুরু করেছে আম। দিনক্ষণ ঠিক করার কারণে কেউ অপরিপক্ক আম পাড়ে না, আবার বাজারজাতও করে না। তাছাড়া এ সময়ের মধ্যে গাছে গাছে আম পেকে যায়। বাইরের ব্যাপারীরা আমের পচন রোধের জন্য তাদের আড়তে এমনটি করে থাকে। প্রত্যেক উপজেলায় নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কৃষি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মনিটরিং কমিটি করা হয়েছে। যারা সব দেখভাল করবে।
জেলা প্রশাসন থেকে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে আম বাজারের উপর নজরদারির জন্য। এ কমিটি আমচাষী, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সব সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে। আর আম পরিবহনে যেন কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করবে পুলিশ।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছর জেলায় ১৬ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমিতে আম বাগান ছিল। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৩ হেক্টর। আর বাগানে রয়েছে ২৪ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯টি আম গাছ। কোনো দুর্যোগ না হলে এবার ৬ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলার বাঘা উপজলার মণিগ্রাম এলাকার আমচাষী শফিকুল ইসলাম জানান, তার ৪৫ বিঘা জমিতে আমবাগান রয়েছে। এর মধ্যে গোপালভোগ জাতের আম রয়েছে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে। কয়েকদিন আগে থেকে গাছেই গোপালভোগ আম পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রশাসনের সময় বেঁধে দেবার কারণে গাছ থেকে আমা নামানো শুরু করেননি। আজ গাছ থেকে আমপাড়া শুরু করবেন।
মহানগরীর ছোট্টবনগ্রাম এলাকার সুমন আলী জানান, গত দু বছর থেকে ২০টি গাছের একটি বাগান চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিয়েছেন। বাগানটিতে গোপালভোগ, গুটি, খিরসাপাত ও ল্যাংড়া জাতের আম রয়েছে। এবারো আমের ভালো ফলন হবে বলে আশা করছেন। বৈশাখ মাসে ঝড়ে কিছুটা আম ঝরে পড়লেও তেমন ক্ষতি হয়নি। এ বছরও শুরুতে প্রতিমণ আম কমপক্ষে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাজশাহীর উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, চলতি মৌসুমে তেমন ঝড় না হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রচুর আম রয়েছে। বৈশাখ মাসও শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে আর ঝড়ের সে রকম কোনো আশঙ্কা নেই। আশা করা যায় চলতি মৌসুমে আমের ফলন ৬ লাখ মেট্রিকটন ছাড়িয়ে যাবে।
জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের বলেন, বাজারে অনেক আগে কিংবা পরে আম পাওয়া যায়। আর এ কারণে ক্রেতারা মনে করেন আমে কেমিক্যাল দেয়া আছে। ক্রেতাদের এই ভীতি দূর করতেই আম পাড়ার একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে দেয়া হয়েছে। এতে কেউ মনে করবে না যে, এই আম এখন গাছে থাকার কথা নয়। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে আমচাষী, ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাসহ সকলের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে।