রমজান ধূমপান ছাড়ার উত্তম সময়
রোজা রাখা মানে হচ্ছে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার অভ্যাসটাকে যাচাই করে নেয়া। এতে যে শুধু ইবাদত হচ্ছে তা নয়। মহান আল্লাহতাআলা মানুষের স্বাস্থ্যকে একটি সঠিক ধারায় নিয়ে আসার জন্যও রমজানুল মোবারকের দিনগুলোকে আমাদের জন্য উপহার হিসেবে দিয়েছেন।
মানুষ যখন বেশি পরিমাণ খাবার খেয়ে শরীরকে খারাপ কোলেস্টেরলের খনি বানিয়ে তোলে, তখনই রমজান আসে বছর ঘুরে। রোজা রাখার ফলে শরীরের সব খারাপ কোলেস্টেরল ভাঙতে থাকে এবং শরীরে সৃষ্টি হয় উপকারি বিভিন্ন উপাদান। কমে যায় চর্বির পরিমাণ, ব্লাড প্রেসার চলে আসে নিয়ন্ত্রণে। সারাদিন অভুক্ত থাকার ফলে শরীরের চর্বিগুলো ভেঙে ত্বককে করে তোলে মসৃণ।
কিন্তু অনেকেই শুধু ধূমপান বা অন্য কোনো নেশার কারণে বিভিন্ন ছলে রোজা বাদ দিয়ে থাকতে চান। তারা ভেবেই নেন রোজা রাখলে নিজের কাজটা সঠিকভাবে তারা করতে পারবেন না। এ কারণেই তারা নেশার মতো খারাপ কাজ থেকে বের হয়ে আসতে পারেন না ।
যারা ধূমপান বা অন্যান্য নেশা করে থাকেন, তাদের শরীরে রক্তের সঙ্গে ওই নেশা এমনভাবে মিশে যায়, যা পরে গ্রহণ না করলে মস্তিষ্ক বারবার মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে এবং একসময় উদগ্রীব হয়ে সে আবার নেশা গ্রহণ শুরু করে। রোজা রাখার মধ্য দিয়ে এই খারাপ নেশাগুলো খুব দ্রুত বাদ দেয়া সম্ভব ।
ধূমপান হচ্ছে এমন একটি নেশা, যা সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ করে থাকে। অনেকেই মনের অজান্তে তার সন্তানকে কোলে নিয়েই শুরু করে দেন সিগারেট খাওয়া। এতে করে নিজের চেয়েও বেশি ক্ষতি করে ফেলেন সন্তানের। রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সামনে, হোটেলে বসে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণপরিবহনেও অনেকে ধূমপান করেন, এমনকি রমজানের মধ্যেও!
অনেকে আবার খুব দ্বিধাগ্রস্ত ধূমপান করা নিয়ে, তবুও ছাড়তে পারেন না। এই অপরাধবোধ এবং রমজানের পবিত্রতা দুইয়ে মিলে আপনি হয়ে উঠতে পারেন ধূমপানমুক্ত একজন ব্যক্তি। আর একজন ধূমপানমুক্ত মানুষ হল পরিবেশ ও নিজের পরিবারের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাই মন থেকে শুধু বলুন, আমি আল্লাহতাআলার ওপর আস্থা রেখে রোজা শুরু করলাম এবং ধূমপান বাদ দিয়ে দিলাম। দেখবেন আপনি পেরেছেন। ইচ্ছাশক্তি ও ধর্মের প্রতি অগাধ সম্মান প্রদর্শনই আপনাকে খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে।
ছোটবেলা থেকেই যদি কোনো পরিবারে সঠিকভাবে রোজা রাখার চর্চা শুরু করানো যায়, তবে শিশুদের মধ্যেও নিজেকে সংবরণ করার অভ্যাস তৈরি হবে। একজন শিশু যখন দেখবে পরিবারের সবাই মিলে একটি মাসে বিভিন্ন ধরনের সংযম পালন করছে, তখন সে এমনিতেই সংযমে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। রোজা পালন একটি অভ্যাস। এই অভ্যাসটাই আপনাকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে এবং আপনার পরিবারকেও দিতে পারে সার্বিকভাবে সভ্য হওয়ার শিক্ষা।
আসুন সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিতকরণে আমরা প্রতি ঘর থেকে সুরক্ষা শুরু করি, রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি এবং ধূমপানমুক্ত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলি। ধূমপানমুক্ত হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করা মানেই সঠিক ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ।