সাতক্ষীরায় স্ত্রী হত্যায় স্বামীর যাবজ্জীবন

স্ত্রী মাশহুদা সুলতানাকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে স্বামী আব্দুল কুদ্দুসকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের হাকিম মো. আশরাফুল ইসলাম জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় দেন।

সাজাপ্রাপ্ত আসামির নাম আব্দুল কুদ্দুস। তিনি খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের মহিউদ্দিন সরদারের ছেলে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল কুদ্দুস ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রথম বর্ষে পড়াশুনা করাকালিন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের মাশহুদা সুলতানার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বেকার ছেলে হিসেবে কুদ্দুসকে অনেকেই মেনে নিতে চাননি। একপর্যায়ে কুদ্দুস চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত মাশহুদাকে স্বামীর সঙ্গে কাটাতে দেয়া হবে না বলে মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ নিয়ে মাশহুদার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুদ্দুসের বিরোধ চলে আসছিল।

ঘটনার বিবরণে আরো জানা যায়, ২০১২ সালের ২২ জুন আবদুল কুদ্দুস তার শ্বশুর বাড়ি সাতক্ষীরার খানপুর গ্রামের পীর পরিবারে বেড়াতে আসেন। পূর্বের মনোমালিন্যকে কেন্দ্র করে রাতে মশিহুদা তার মায়ের কাছে শুতে যায়। একপর্যায়ে ২২ জুন রাত আড়াইটার দিকে কুদ্দুস তার স্ত্রীকে মায়ের কাছ থেকে ডেকে এনে তার ঘরে নিয়ে আসে। ২৩ জুন ভোরে মাসুদাকে ডাকতে যেয়ে মা ঘরের দরজা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। একপর্যায়ে মেয়ের চাচা মহাম্মদ এলাহী বক্সকে ডেকে এনে তালা ভেঙে মাশহুদাকে খাটের উপর রক্তাক্ত মৃত অবস্থায় দেখতে পান। সকাল সাতটার দিকে কুদ্দস স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করে সদর থানায় আত্মসমর্পণ করেছে মর্মে নিহতের পরিবারের স্বজনরা জানতে পারেন।

২৩ জুন রাতেই নিহতের চাচা মহাম্মদ এলাহী বক্স আব্দুল কুদ্দুসের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই দিন কুদ্দুস তার স্ত্রীকে নির্যাতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায় স্বীকার করে বিচারিক হাকিম আব্দুল্লাহ আল মাসুমের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাসান ওই বছরের ১৫ আগস্ট এজাহারভুক্ত আসামির নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় ১২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। আসামি এ মামলায় জামিন পাননি।

মামলার নথি ও সাক্ষীদের জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে আসামি আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে স্ত্রী মাশহুদাকে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক এ রায় দেন।  রায় ঘোষণার সময় আসামি আবদুল কুদ্দুস কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

হত্যার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেও বয়স বিবেচনায় তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়নি বলে বিচারক তার আদেশে উল্লেখ করেছেন।

এদিকে রায় ঘোষণার পর মামলার বাদী ও নিহতের চাচা সাংবাদিকদের জানান, এ রায়ে তিনি খুশি হননি। আব্দুল কুদ্দুস একজন জঙ্গি। তার মৃত্যুদণ্ড হবে এমনটিই তিনি আশা করেছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. কার্তিক চন্দ্র দাস। আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. আবু বক্কর ছিদ্দিক।

এডিটর-ইন-চিফ : মাহমুদ হাসান সোহেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : আবু বকর সিদ্দিক সাগর
নিউজরুম মেইল: khulnanews24@gmail.com এডিটর ইমেইল : editor@khulnanews.com
Khulna Office : Chamber Mansion (5th Floor), 5 KDA C/A, Jessore Road, Khulna 9100,
Dhaka Office : 102 Kakrail (1st Floor), Dhaka-1000, Bangladesh.
কপিরাইট © 2009-2020 KhulnaNews.com